গল্‌ফ ক্লাব তৈরি করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার

Modern technology has become a total phenomenon for civilization, the defining force of a new social order in which efficiency is no longer an option but a necessity imposed on all human activity.

admin
4 Min Read

প্রায় ৫০ বছর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল আমেরিকাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশেই চাষের জমি অধিগ্রহণ করে রাজকীয় গল্‌ফ ক্লাব তৈরি করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার। নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। সঙ্গে অবশ্য কয়েক মাসের অন্নসংস্থানের জন্য চাল সরবরাহ করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এই আশ্বাসেও সন্তুষ্ট নন কৃষকেরা।

 
 

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুসারে, গল্‌ফ ক্লাব তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে ৯৯০ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের নিকটবর্তী হাং ইয়েন এলাকায় তৈরি হতে চলেছে এই গল্‌ফ ক্লাব। তবে জমি অধিগ্রহণ বা গল্‌ফ ক্লাব নির্মাণে নাক গলাচ্ছে না ট্রাম্প পরিবার। আপাতত সেই কাজ করছে ভিয়েতনামের রিয়েল এস্টেট সংস্থা ‘কিনব্যাক সিটি’ এবং সেটির সহযোগী সংস্থাগুলি। গল্‌ফ ক্লাব পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে তার চাবি তুলে দেওয়া হবে ট্রাম্প পরিবারের হাতে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের পরিবার পরিচালিত ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ সংস্থার হোটেল, আবাসন রয়েছে। তবে ভিয়েতনামে এই প্রথম তারা যৌথ ভাবে ব্যবসার কাজে নামল।

 

রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বিপুল পরিমাণ জমিতে মূলত বিভিন্ন রকমের ফলের চাষ হয়। স্থানীয় কৃষকেরা এই ফল চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। জমি থেকে উৎখাত করা হলে কী ভাবে পেট চলবে, তা নিয়ে ভাবিত তাঁরা। অন্য দিকে, এই প্রকল্পে জমি দিলে কত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ট্রাম্পদের সংস্থা, ভিয়েতনামের স্থানীয় সংস্থাটিও। এই বিষয়ে জবাব মেলেনি ভিয়েতনামের কৃষি মন্ত্রক এবং স্থানীয় প্রশাসনের তরফেও। কয়েক জন কৃষককে উদ্ধৃত করে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি স্কোয়ার মিটার জমির জন্য কৃষকদের ১২ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১০৫২ টাকা) থেকে সর্বোচ্চ ৩০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২৬৩১ টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক জন নাম প্রকাশ না-করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রতি স্কোয়ার মিটারে ১৪ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১২২৮ টাকা)-এর বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জমির মাপ এবং অবস্থান অনুযায়ী দামের হেরফের হবে বলে জানান তিনি।

গত মে মাসে এই গল্‌ফ ক্লাব প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গিয়ে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী তথা কমিউনিস্ট নেতা ফাম মিন চিন জানিয়েছিলেন, কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ট্রাম্পের পুত্র এরিকও। তবে একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ৫০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৩৮৬ কোটি টাকারও বেশি) ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তার পরেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। মোট খরচ ধরা হচ্ছে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। কৃষকদের বক্তব্য, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য তাঁদের সরাসরি দর কষাকষি করতেও দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের সাহায্যে সব কাজই করছে স্থানীয় সংস্থাটি। ভিয়েতনাম প্রশাসন মনে করছে, এই গল্‌ফ ক্লাব তৈরি হয়ে গেলে পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। বহু বিদেশি পর্যটক এই রাজকীয় ক্লাবের আকর্ষণেই সে দেশে যাবেন।

 

প্রসঙ্গত, হুগলি জেলার সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বহুফসলি জমি নষ্ট করে কারখানা কেন, এই প্রশ্ন তুলে আন্দোলনে নামেন কৃষকেরা। পরে বহু সংগঠন, রাজনৈতিক দল কৃষকদের এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ায়। সিঙ্গুর লাগোয়া দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ধর্নায় বসেন তৃণমূলনেত্রী, অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে টানা ২৬ দিন অনশনে বসেছিলেন। আন্দোলনের জেরে ২০০৮ সালে সিঙ্গুর থেকে কারখানা সরানোর কথা জানায় টাটা গোষ্ঠী। পরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, সিঙ্গুরে যে ভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা অবৈধ। অধিগ্রহণ করা জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। অনেকেই মনে করেন, সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে তিন দশকের বাম সরকারের ভিত নড়ে যায়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের বাম সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। ঘটনাচক্রে, ভিয়েতনামেও বিতর্কের কেন্দ্রে সেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ। আরও কাকতালীয় যা, তা হল, সেখানেও ক্ষমতায় এক বাম সরকার। সেখানেও এই জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলন গড়ে উঠবে কি না, তা-ই এখন দেখার।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *